শুক্রবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০২১, ১২:০৮ অপরাহ্ন
কাজী ফরহাদ
ইদানীং নীলা কেমন যেনো হয়ে গেছে। ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করছে না। টাইম মতো ঘুমাচ্ছে না। এভাবে চলতে চলতে একমাস পাড় হয়ে যায়। রাতুলও বুঝে নীলা বড্ড ভালোবাসে তাকে। কিন্তু রাতুল চায় না, তার জন্য নীলার কষ্ট হোক। রাতুলের মা-বাবা সময় করে একদিন নীলার বাসায় যায় একদিন। রাতুল এবং নীলার বিয়ের ব্যাপারে কথা বলে। নীলার মা, আফরোজা খানম মোটেও প্রস্তুত নয়, নীলার বিয়ে দিতে। এত অল্প বয়সে বিয়ে হোক, অল্প বয়সে নীলা মা হোক! তা চায় না আফরোজা খানম। ইদানীং অনেক খবর দেখছেন, অল্প বয়সে মা হতে গিয়ে কতো মেয়ে মারা যাচ্ছে। সেই ভয়ে আফরোজা খানম বিয়ে দিতে প্রস্তুত না।
রাতুলের মা রেজিয়া খাতুন, আফরোজা খানমকে বললেন,
” ‘আমরা চাই বিয়ের অনুষ্ঠান পরে হোক। আপাতত তাদের এ্যাগ্রিমেন্টটা শেষ করে পেলি। আজকালকার ছেলেমেয়ে, কখন কী করে বসে না জেনে না বুঝে’।
” ‘যদি হঠাৎ কোনো কোনো বিপদজনক কাজ করে বসে, তখন শুধু শুধু দু’জন কষ্ট পাবে। তাদের কষ্টে আমরাও কষ্টের শিকার হইবো’।
রেজিয়া খাতুনের কথাগুলো শুনে আফরোজা খানম ভাবতে লাগলেন,
” ‘তিনি তো ঠিক কথাই বলছেন! তার চেয়ে বরং উনার কথার সাথেই একমত হই।
” ‘আপনি একদম ঠিক কথা বলেছেন। কিন্তু আমার কথায় কাজ হবে না। নীলার বাবার সঙ্গে কথা বলে বুঝতে হবে উনার মতামত কী? উনার সঙ্গে কথা বলে আমি আপনাদেরকে জানাব’।
রেজিয়া খাতুনের পাশেই বসে আছেন রহমত আলী। তাদের কথা শুনে তিনি বললেন,
” ‘আচ্ছা ঠিক আছে তবে তাই হোক’।
রাতুল ফেসবুকে স্ট্যাটাস পোষ্ট করেছে,
*জীবনের ঘটে যাওয়া প্রতিটি মুহূর্ত ভুলে থাকা সম্ভব!
তবে প্রথম প্রেম ভুলে থাকাটা অসম্ভব।
এমন স্ট্যাটাস রাতুল ফাস্ট টাইম ফেসবুকে পোষ্ট করেছে। বন্ধু-বান্ধব সবাই স্ট্যাটাস দেখে থমকে যায়। বুঝতে পারে, অনুভব করতে পারছে, রাতুলের জীবনে প্রেম নামক বস্তুটি ছিল। তার জীবনে এমন কেউ ছিল, যে রাতুলকে কষ্ট দিয়েছে। রাতুল তাকে আজও ভুলতে পারছে না। নীলা রোজ রাতুলের প্রোফাইল চেকিং করি। ঘুরাঘুরি করে। কবিতাগুলো বার বার পাঠ করে। ভীষণ ভালো লাগে। নীলার ইচ্ছে হয়, এভাবে কবিতা লিখতে কিন্তু চেষ্টা করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়। আজ যখন প্রোফাইল চেক করতে প্রোফাইলে গেল, তখন-ই স্ট্যাটাসটা চোখে পড়েছে নীলার। স্ট্যাটাস দেখে নীলা মনে মনে ভাবছে,
” ‘এতদিনে বুঝতে পেরেছি! কেন রাতুল আমার প্রপোজাল একসেপ্ট করেনি। সে অন্য কাউকে ভুলতে পারছে না! তার এক্স গার্লফ্রেন্ড রয়েছে। যাকে নিয়ে এখনও ভাবে। তবে ব্যাপার না ভুলানোর দায়িত্বটা আমার।
নীলা প্রতিদিন ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট কেন্সেল করে আবার এড দেয়। কিন্তু রাতুল একসেপ্ট করে না। মেসেজ করে নীলা! রোজ শত শত মেসেজ সেন্ড করছে। কিন্তু একটাও সিন হয় নি।
সাপ্তাহ খানেক পর আফরোজা খানম ফোন করে জানান,
তারা যেন এ্যাগ্রিমেন্টের ব্যস্ততা করেন। রহমত আলী দিন-ক্ষণ ঠিক করে নিয়েছেন। আগামী বৃহস্পতিবার এ্যাগ্রিমেন্ট হবে। রাতে ডিনারের টাইমে রাতুলের বাবা রহমত আলী, রাতুলকে উদ্দেশ্য করে বলেন,
” ‘এই রাতুল! আগামী বৃহস্পতিবার আমাদের একটা পার্টি আছে। আমরা পুরো ফ্যামিলি যাচ্ছি। তুই কোনো অজুহাত দেখাবি না আগেই বলে রাখলাম’।
” ‘বাবা তোমারা যাও! আমার এসব পার্টি-সার্টি ভালো লাগে না’।
” ‘ভালো না লাগলেও তোমাকে যেতে হবে বাবা’।
রেজিয়া খাতুন ওপাশ থেকে বললেন,
” ‘তাদেরকে আমরা কথা দিয়েছি! আমরা পুরো ফ্যামিলি আসব’।
” ‘উফ’স! কেন আমাকেই যেতেই হবে? আমি ছাড়া কোনো কাজ হয় না নাকি তোমাদের?’
রেজিয়া খাতুন একটু রাগান্বিত কণ্ঠে বললেন,
” ‘অভদ্র ছেলে! মা-বাবার সঙ্গে কীভাবে কথা বলতে হয় সেটাও জানো না। কীসের জন্য তোমাকে এত পড়াশোনা করানো হয়েছে। একটা পার্টিতে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে! জাহান্নামে তো আর যাওয়ার কথা বলা হয়নি।’
রহমত আলী রেজিয়া খাতুনকে বললেন,
” ‘হইছে এবার থাম তুমি’।
ফারিহাও মিনিত আরম্ভ করেছে,
” ‘ভাইয়া! এত জেদ না করে চলো মজা হবে খুব’।
” ‘আচ্ছা ঠিক আছে। তবুও তোমরা হ্যাপি থাকো’।
রহমত আলী, রেজিয়া খাতুন, ফারিহা সবাই হাসতে হাসতে শেষ। রহমত আলী ভাবেন মাঝে মাঝে, ছেলেটা এত রাগি কেন? এত জেদি কেন? কিন্তু কোনো উত্তর খুঁজে পাননি।
রাত হয়েছে অনেক। ঘড়িতে ১১টা বেজে ১৫ মিনিট। আফরোজা খানম নীলাকে ডাকছেন,
” ‘এই নীলা! নীলা’।
পাশের রুম থেকে নীলা জবাব দেয়,
” ‘জ্বী মা আসছি।
আফরোজা খানমের কাছে আসতেই জিজ্ঞেস করলেন,
” ‘সত্যি করে বলতো তোর মন খারাপ কেন’?
” ‘কে বলছে মন খারাপ।
” ‘মায়ের কাছে মিথ্যে কথা বলে কী পাড় পাবি নকি?
তুই কী ভাবছিস, আমি কিছুই জানি না। ওই যে ছেলেটা কী যেন নাম,?
জেরিন তখন বলে দেয়,
” ‘রাতুল।
” ‘হ্যাঁ রাতুল। রাতুলের সঙ্গে তোর কী সম্পর্ক আমি সব জানি।
নীলা অবাক হয়, জিজ্ঞেস করে,
” ‘মা তুমি জানো কীভাবে?
” ‘আমি তো তোর মা! তোকে জন্ম দিয়েছে! গর্ভে ধারণ করেছি। আমি যদি না জানি তাহলে এই পৃথিবীতে আর কে জানবে’।
নীলা মায়ের দিকে তাকায়। জিজ্ঞেস করে,
” ‘মা আমি কী ভুল কিছু করেছি’?
” ‘না মোটেও ভুল করো নাই’।
” ‘মা আমি রাতুলকে বড্ড ভালোবাসি। কিন্তু রাতুলকে আজও মনের কথাগুলো বলতে পারিনি। বলতে গেলেই বড্ড ভয় করে’।
আফরোজা খানম মিটমিট হাসেন। সঙ্গে জেরিনও। নীলা অবাক, মনে মনে ভাবে কাহিনী কী ওরা হাসছে কেন?
নীলা মুখ ফুটে কথা বলে,
” ‘মা তোমরা হাসছ যে’।
আফরোজা খানম এবার বললেন,
” ‘রাতুলকে ভালোবাসার কথা বলতে না পেরে, তুই যে রোজ কান্না করছ, খাওয়া দাওয়া করিস না, কষ্ট পাচ্ছিস, এগুলো আমার একদম সহ্য হচ্ছিলো না বলে। আমি আগামী সাপ্তাহে রাতুলের সঙ্গে তোর এ্যাগ্রিমেন্টের ব্যস্ততা করে রেখেছি’।
নীলা চমকে যায়। খানিকটা অবাক হয়। মাকে জড়িয়ে ধরে বলে,
” ‘মা তুমি সত্যি বলছ’?
” ‘আমি কী কখনো মিথ্যে বলিছি তোদের’।
” ‘থ্যাংক ইউ! লাভ ইউ সো মাস মা’।
” ‘হইছে আর ঢং করতে হবে না। এবার ডিনার করতে চলো। অনেক রাত হয়েছে’।
” ‘না আমি খাব না। তোমরা খাও’।
” ‘তোর পছন্দের চিংড়ি মাস ভুনা করেছি’।
” ‘ওহ মাই গড! আগে বলবে তো’।
নীলা বোনকে ডাকছে,
” ‘এই জেরিন, জেরিন’।
” ‘কী হইছে এত খুশি কেন’?
” ‘আমার হাতে চিমটি কাট তো’।
” ‘কেন’?
” ‘মা যা বলছে তা কী সত্যি নাকি স্বপ্ন দেখছি’।
” ‘সব সত্যি! আমিও জানি সব। রাতুলের মা-বাবা সেদিন বিয়ের ব্যাপারে কথা বলেছিলেন’।
” ‘তাহলে তুই আমাকে বললে না যে’?
” ‘আসলে মা মানা করেছিলেন। তোমাকে যেন কিছু না বলি’।
” ‘তুই কী আমার বোন না অন্য কারো বোন’।
” ‘নিশ্চই তোমার বোন’।
” ‘আমার মনে হচ্ছে তুই আমার শত্রু’।
রান্নাঘর থেকে আফরোজা খানমের গলার আওয়াজ,
” ‘তোরা ঝগড়া করবি নাকি আমাকে একটু হেল্প করবে, খাবারগুলো টেবিলে নেওয়ার’।
আফরোজার কথা শুনে জেরিন বলল,
” ‘মা আমার হাতে খুব ব্যথা। আমি বরং চেয়ারে বসি।
জেরিনের কথা শুনে নীলা বলল,
” ‘মা আমারও পা’ ব্যথা করছে।
মেয়েদের কথা শুনে আফরোজা খানম হাসেন। মনে মনে ভাবেন,
” ‘মেয়েদের বিয়ে দেওয়ার পর আমার কী হবে? কাদেরকে এভাবে কাজের আদেশ দেবো। কে অজুহাত দেখাবে কাজের? কার মুখ থেকে এত হাস্যকর কথা শুনব?
ভাবতে ভাবতে আফরোজা খানমের চোখের জল বেয়ে গালে যায়। নীলা রান্নাঘরে যায় একটু পানি পান করবে বলে। দেখে আফরোজা খানমের চোখে জল। নীলা বড্ড কষ্ট পায়। জিজ্ঞেস করে,
” ‘মা তোমার কী হয়েছে চোখে জল কেন’! জেরিন এসে দেখ মা কান্না করছেন।
নীলার ডাকে এক দৌড়ে জেরিন রান্নাঘরে চলে আসে। মাকে জড়িয়ে ধরে বলে,
” ‘মা কী হয়েছে তোমার’? নিশ্চয়ই নীলা আপ্পি কিংবা আমার কথায় কষ্ট পেয়েছেন। সরি মা আর কখনো তোমার কথা অমান্য করব না। কাজের টাইমে ডাকলে অজুহাত দেখাব না। তুমি যা বলবে তাই করব’।
বলতে বলতে জেরিন কেঁদে ফেলল।
আফরোজ খানম বললেন,
” ‘কিছু হয় নি মা! চোখে মেবী কিছু পড়েছে।
চলবে……
© All rights reserved © 2020 blog.bddorpon24.com
Leave a Reply