মঙ্গলবার, ০২ মার্চ ২০২১, ০৪:৫৯ অপরাহ্ন
কাজী ফরহাদ
আফরোজা খানম জেরিনের মথায় হাত ভুলচ্ছেন। জেরিন আরো শক্ত করে মা’কে জড়িয়ে ধরে। এমন কষ্টের মুহূর্তে নীলাও চোখের পানি আটকে রাখতে পারেনি। অবশেষে কেঁদে ফেলেছে। দু’বোনের কান্না দেখে, আফরোজা খানম চুপটি করে থাকতে পারেননি। এবার তিনি মুখ খুলেছেন,
” এই তোরা এভাবে কান্না করছিস কেন? আমি কী তোদের কথায় কষ্ট পেয়ে কান্না করছি না-কি?
আফরোজা খানমের এমন সহজ বক্তব্য শুনে, নীলা জিজ্ঞেস করে,
” মা! তাহলে তুমি কান্না করছ কেন?
” তোদের বিয়ে হয়ে যাবার পর যখন তোরা বাসা থেকে চলে যাবে, তখন আমি কার সঙ্গে গল্প করব, কার সঙ্গে বসে আড্ডা দিব? সেসব কথা ভেবে কান্না করছি।
আফরোজা খানমের এত দুঃখের কথা শুনে জেরিন বলল,
” মা এব্যাপার নিয়ে তুমি কান্না করছ? এটা কী কোনো কথা হইলো। তুমি ভাবলে কী করে আমি তোমাকে ছাড়া একমুহূর্ত থাকব।
” বিয়ের আগে সব মেয়েরা এমন কথ বলে, কিন্তু বিয়ের পরে স্বামীকে পেয়ে সেসব কথা ভুলে যায়।
” মা নীলা আপ্পি হয়তো ভুলে যাবে! কিন্তু আমি ভুলব না।
জেরিনের মুখ থেকে এমন কঠিন কথা শুনে, নিলা তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে। কটকটে মেজাজে বলে,
” মা কি তোর একার নাকি? আমাকে কী কুড়িয়ে এনেছিলেন? যত্তসব ফালতু কথা। বুঝা যাচ্ছে মা’কে ছাড়া কয়েক বছর একা থেকেছি।
এই বিষয় নিয়ে দু’বোন ভীষণ ঝগড়া শুরু করেছে। এত মারাত্তক ঝগড়া দেখে, আফরোজা খানম বললেন,
” অনেক ঝগড়া হয়েছে এবার থামো। ডিনার করতে আসো। অনেক রাত হয়েছে।
খাবারের টেবিলে বসে খেতে খেতে আফরোজা খানম বললেন,
” আমার বান্ধবীর মেয়ে, আদিবার আগামীকাল গায়ে হলুদ। আমাদের যেতে হবে।
মায়ের কথা শুনে নীলা বলল,
” মা ওই যে বছর খানেক আগে আমাদের বাসায় এসেছিল, ওই আদিবার নাকি?
” হ্যাঁ।
বিয়ে বাড়িতে যাবার কথা শুনে জেরিন বলল,
” ওয়াও! কতোদিন পর বিয়ে বাড়িতে যাব। কী আনন্দ।
জেরিনের এত আনন্দ দেখে নীলা বলল,
” দেখো! কি নাচ-নাচতেছে। বুঝা যাচ্ছে বিয়ে ওর।
” আমি তুই সবসময় আমার সঙ্গে এমন আচরণ কেন করিস? আমি ছোটবেলা থেকেই, কারো বিয়ের কথা শুনলে আনন্দে উল্লাসিত হই। যাও তোমরা বিয়েতে যাও। আমি যাবনা।
বিয়ে নিয়ে আবার দু’বোনের মধ্যে ঝগড়া। আফরোজা খানম এবার একটু রেগে বললেন,
” তোদের প্রবলেম কী? সারাদিন শুধু ঝগড়া আর ঝগড়া। তোদের কাউকে যেতে হবে না। আমি একাই যাব।
সকাল আটটা বাজে ঘড়িতে। নেহাল ফোন করেছে রাতুলের কছে। রাতুল এই টাইমে ঘুমায়। বেলা এগারোটার আগে রাতুল ঘুম থেকে উঠে না। প্রতি রাত কতো কবিতা, গল্প লিখতে হয় তাকে। সেজন্য সকালে লেইট করে ঘুম থেকে উঠে। মোবাইলে রিং হচ্ছে। একটা সময় ঘুম থেকে উঠে রাতুল ফোন রিসিভ করে।
” এই রাতুল কতোগুলো ফোন দিয়েছি এখনো তুই ঘুমচ্ছিস! এদিকে বেলা কয়টা বাজে হিসেব আছে। তোরা কাজে লাগবে কবে বল তো আমায়।
” এত মুরব্বি মার্কা কথা না বলে, বেশি পণ্ডিতি না করে, উপদেশ মূলক কথা না বলে, কীসের জন্য ফোন করেছিস সেটা বল।
” আজ আমার গায়ে হলুদ! সেই কথা কী মনে আছে? না আবার স্বরণ করিয়ে দিতে হবে।
” মনে থাকবে না কেন? সন্ধ্যায় আসছি সবাই। আর আমার ফ্যামিলি আজ আসতে পারবে না। কাল সকালে আসবে। কিছু মনে করিস না।
” এ কোনো কথা হইল।
” গায়ে হলুদের কথ বলার জন্য তুই আমার আরামের ঘুম হারাম করলি সালা বদমাইস।
” আমার গায়ে হলুদ থেকে তোর ঘুমের গুরুত্ব বেশি নাকি?
” অবশ্যই।
” তুই বন্ধু নামে কলংক সালা। খুব কষ্ট পেয়েছি। যা ঘুমা তাহলে।
রবিন,রাতুল,রাই,উর্বি এক সঙ্গী হয়ে সন্ধ্যায় যায় রাতুলের বাসায়। রাতুল আর রবিন নীল পাঞ্জাবী পরেছে। রাই এবং উর্বি পিংক কালারের শাড়ি পরেছে। চারজন মিলে নেহালের গায়ে হলুদে নাচ করবে। রাত এগারোটা বাজে। কিছুক্ষন পর গায়ে হলুদ শুরু হবে। তখনি রাতুলের চোখে পড়ে, সাদিয়েকে। সঙ্গে একটা ছেলে। হয়তো সাদিয়ার হাসব্যান্ড হবে। রাতুল দৌড়ে নেহালের কছে যায়! জিজ্ঞেস করে,
” এই নেহাল! সাদিয়া এখানে কেন? তোর কী হয় সাদিয়া?
নেহাল আস্তে করে বলল,
” কেন তোকে কিছু বলেছে নাকি?
” আরে না। তোদের বাসায় সাদিয়াকে আগে কখনো দেখিনি। তাই জিজ্ঞেস করলাম।
” ওয়েট! সাদিয়াকে তুই কীভাবে চিনস?
” অনেক আগে থেকে চিনি। খুব ভালো করে চেনা আছে।
” ওহ আচ্ছ সাদিয়া হচ্ছে, আমার ভাবির কাজিন। খুব ভালো একটা মেয়ে।
রাতুল মনে মনে বলে,
” কতোটা ভালো আমার জানা আছে।
চলবে……
© All rights reserved © 2020 blog.bddorpon24.com
Leave a Reply